
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার মন খারাপ থাকলে গণভবনে গিয়ে তাকে গান শুনিয়ে আসতেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। মঙ্গলবার (১৩ মে) মিরপুর মডেল থানার হত্যা মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শুনানিতে ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী এ কথা জানান।
এদিন বিকেল ৩টার দিকে মমতাজকে ঢাকার সিএমএম আদালতের সাততলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালতে তোলা হয়। ৩টা ৭ মিনিটে শুনানি শুরু হয়।
কাঠগড়ায় পুলিশ বেষ্টনীতে মমতাজের হেলমেট ও মাস্ক খুলে দেওয়া হয়।
এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে বক্তব্য রাখেন। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের সমর্থনে ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বক্তব্য রাখেন।
শুনানির শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ।
একজন ফুটবলার ভালো খেললে আমরা তার খেলাটাই দেখি। তাকে পছন্দ করার কারণ তিনি ভালো খেলেন। তেমনিভাবে নায়িকার অভিনয়, শিল্পীর ভালো গান আমরা পছন্দ করি। তারা কোন দল করে, সেটা দেখা হয় না।
তাদের কাজটাকে আমরা ভালোবাসি। তবে এই আসামি জনগণের ভালোবাসাটাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন।’
পাবলিক প্রসিকিউটর আরো বলেন, ‘আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি ছিল, গুম, আয়নাঘর, আন্দোলন করলেই যখন গুলি করা হতো তখন এই মমতাজ গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করতে গেল!’
সংসদে তার ভূমিকা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “সংসদের অধিবেশনে যেখানে মিনিটে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে সে গান গাইল—‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা’। সংসদে তোফায়েল, আমুসহ আওয়ামী লীগের অন্য সিনিয়র নেতারা যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কটু কথা বলে নাই। সেখানে সে বক্তব্য রাখল, খালেদার বাপের নাম কী? এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা ‘শেইম শেইম’ বলে স্লোগান দেন।”
শুনানির এক পর্যায়ে পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতকে বলেন, ‘এই আন্দোলনের সময় যখন হাসিনার মন খারাপ থাকত তখন সে গণভবনে গিয়ে হাসিনাকে গান শোনাত।’ এ সময় এজলাসে হাস্যরসের তৈরি হয়।
কাঠগড়ায় পুরো সময় বিষণ্ন থাকলেও পাবলিক প্রসিকিউটরের এই বক্তব্য শুনে মমতাজ নিজেও হাসতে থাকেন।
এরপর বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মো. সাগর।
এ ঘটনায় গত বছর ২৭ নভেম্বর নিহতের মা বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মামলায় ২৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ মামলার মমতাজ বেগম ৪৯ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি।
নয়াশতাব্দী/এসআর