
ছোটবেলায় হারান বাবাকে। পরে মায়ের সঙ্গে আসেন ঢাকায়। ধীরে ধীরে হন সাবলম্ভী। শুরু করেন ব্যবসা। খুব সুখেই কাটছিল তার সংসার। তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল একটি সংসার, একটি স্বপ্ন ও একটি ভবিষ্যৎ। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ রক্তাক্ত। পাথর মেরে হত্যা করা হলো তাকে। ঘটনাটি মিটফোর্ডে পাথর মেরে হত্যা করা ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের।
শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে সোহাগের লাশ নিয়ে বরগুনায় পৌঁছায় তার স্বজনরা। পরে সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকায় মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। স্থানীয়রা ভিড় করেন তার বাড়িতে।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোহাগের বয়স যখন মাত্র ৭ মাস তখন বজ্রপাতে মৃত্যু হয় তার বাবা আইউব আলীর। এরপর তার মা আলেয়া বেগম তিন সন্তানকে নিয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকা চলে যান। ছোটবেলা থেকেই সংগ্রামের মধ্যে বেড়ে ওঠা সোহাগ পরে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে একটি দোকান দেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই দোকান থেকেই জীবিকা নির্বাহ করছিলেন।
দোকান চালানোর সময় থেকেই একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করে আসছিল। সোহাগ চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় তাকে হুমকিধামকি দেওয়া। একপর্যায়ে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও তিনি মাথা নত না করে নিজের অবস্থানে অটল থাকেন।
গত বুধবার বিকালে সোহাগকে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় একদল যুবক। দাবি করা হয় চাঁদার টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আটকে রেখে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। একপর্যায়ে নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয় তাকে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায়, দিনের আলোয়, শত মানুষের মাঝে।
স্থানীয়রা জানান, সোহাগ ছিল একজন মেহনতী, নম্র, ভদ্র ও পরিশ্রমী মানুষ। কখনো কারো সঙ্গে বিরোধে জড়াননি। তার একমাত্র অপরাধ ছিল, তিনি চাঁদা দিতে রাজি হননি।
নিহত সোহাগের বড় বোন ফাতেমা বলেন, ‘আমার ভাই গত ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছিল। সেই ব্যবসা নিয়েই হিংসা, প্রতিহিংসা সবকিছু। ওরা দোকানটা দখল করতে চেয়েছিল। টাকা না দিলে তারা মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল বহুদিন ধরে। শেষ পর্যন্ত ওকে পাথর মেরে খুন করা হলো।’
সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল কয়েকজন। আমার স্বামী রাজি হননি। তারা সহ্য করতে পারছিল না যে চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই তারা আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। তারা শুধু হত্যা করেই শান্ত হয়নি। মৃত্যুর পরে তার নিথর দেহের উপরে পাথর দিয়েও অনেক আঘাত করেছে। আমি এ নরপশুদের বিচার চাই।
নয়াশতাব্দী/এনএ