২ শ্রাবণ, ১৪৩২

১৭ জুলাই, ২০২৫

এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারল না রাজস্ব বোর্ড

নয়া শতাব্দী ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ৪:০৯ অপরাহ্ন
এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারল না রাজস্ব বোর্ড

টানা ১৩ বছরের মতো রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর আদায়ের বিদ্যমান কাঠামো লক্ষ্যপূরণে উপযুক্ত নয়।

সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ডের মোট কর আদায় ছিল তিন লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা কম।

বিদায়ী অর্থবছরে সরকার চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্য রাখলেও শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা করে।

প্রাথমিক তথ্য বলছে—২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে দুই দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে রাজস্ব বোর্ড।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার এক মাস পর রাজস্ব বোর্ডকে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নতুন লক্ষ্যমাত্রাটি অত্যধিক উচ্চাভিলাষী। কারণ তা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।

এটিও আগের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চার শতাংশ বেশি। কর আদায়ে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি গত পাঁচ বছর ধরে গড়ে ১১ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে যে ধরনের কর ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হচ্ছে তাতে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা বাস্তবিকভাবে অর্জন করা সম্ভব নয়।'

তার মতে, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর একমাত্র কার্যকর উপায় হলো কর ফাঁকি কঠোরভাবে রোধ করা।

গত এপ্রিলে সিপিডির এক সমীক্ষায় বলা হয়—কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার প্রায় দুই লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ ছিল করপোরেট কর ফাঁকি।

তৌফিকুল ইসলাম খান মনে করেন, বর্তমান রাজস্ব কাঠামো সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের কাঠামোর মতোই। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছিল।

'আয় বা ব্যয়ের দিক থেকে এই কাঠামো বাস্তবসম্মত নয়। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ও খরচ পরিকল্পনার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়,' বলে মনে করেন তিনি।

তিনি সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয়কে এই অসামঞ্জস্যতার কথা স্বীকার করে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানান।

তার মতে, বছর শেষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরচ কমালে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি রক্ষা হলেও তা টেকসই হবে না। ব্যবস্থাটি ত্রুটিপূর্ণ। অনির্দিষ্টকাল এভাবে চলতে পারে না।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সরকার মোট বরাদ্দের ৪৯ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডির তথ্যে তা জানা গেছে।

তিনি রাজস্ব খাতে অটোমেশন ও ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। তার বিশ্বাস, কর আদায়ে দক্ষতা বাড়াতে অটোমেশন অপরিহার্য।

রাজস্ব বোর্ড আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জন্য প্রায় চার লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল।

নয়াশতব্দী/এসআর