২ আষাঢ়, ১৪৩২

১৬ জুন, ২০২৫

একটি রাবারড্যাম বদলে দিতে পারে ৫ হাজার কৃষকের ভাগ্য

শেরপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ১:৫৯ অপরাহ্ন
একটি রাবারড্যাম বদলে দিতে পারে ৫ হাজার কৃষকের ভাগ্য

শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকোচায় সোমেশ্বরী নদীতে একটি রাবারড্যাম বদলে দিতে পারে ৫ হাজার কৃষকের ভাগ্য। ওই নদীতে একটি রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি কৃষকদের দীর্ঘ দিনের। কিন্তু আজও এর বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে সেচ সংকটে পড়ে শতশত কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, এ নদীর উপর একটি রাবারড্যাম নির্মাণের দাবী উঠে কৃষকদের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া যায় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে প্রতি বছর বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে পরতে হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা, গুরুচরণদুধনই, পানবর, জুকাকুড়া, আয়নাপুর, দুপুরিয়া, কারারগাঁও, বাগেরভিটা, দাড়িয়ারপাড়, কান্দুলী জড়াকুড়া, কালিনগর, ধলি, গজারমারিসহ ১৫টি গ্রামের কৃষক। ওই নদীটির প্রবেশদ্বার শ্রীবরদীতে হলেও পুরো নদীটি বিস্তৃত ঝিনাইগাতী উপজেলায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রায় ৫ হাজার কৃষক ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে থাকে। শ্রীবরদী উপজেলায় আবাদ হয় ৬শ’একর জমি।
শ্রীবরদী উপজেলার ৬শ একর জমিতে বোরো আবাদ করতে সোমেশ্বরী নদীর উজানে বালিজুরিতে প্রতিবছর শুস্কমৌসুমে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর গতিপথ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সেচ সংকটে পরে ভাটি অঞ্চলের ঝিনাইগাতী উপজেলার ১৫ টি গ্রামের শতশত কৃষক।

ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামসহ কৃষকরা জানান, ঝিনাইগাতী উপজেলার ১৫টি গ্রামের শতশত কৃষকের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন বোরো আবাদ। কারণ বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভাটি এলাকার শতশত একর আবাদি জমি পানিতে নিমজ্জীত হয়ে পরে। ফলে এসব জমিতে  আমন আবাদ করতে পারে না কৃষকরা। তাই তাদের একমাত্র ভরসা বোরো আবাদ।

কিন্তু সোমেশ্বরী নদীর উজানে বালিজুড়ীতে স্থানীয় কৃষকরা প্রতি বছর নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর গতি বন্ধ করে দিয়ে নদীর এ পানিতে শ্রীবরদী উপজেলায় বোরো আবাদ করে থাকে। এতে সেচ সংকটে পড়েন ঝিনাইগাতীর প্রায় ৫ হাজার কৃষক। ব্যাহত হয় ভাটি অঞ্চলের কৃষকদের বোরো আবাদ। সোমেশ্বরী নদীর বালিজুড়ীতে যে বাধটি নির্মাণ করা হয়। ওই বাধের পানিতে ২ হাজার কৃষক বোরো আবাদ করে থাকে। 

আর ওই ২ হাজার কৃষকের সেচের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ভাটি অঞ্চলের ৫ হাজার কৃষকের সেচ সংকট সৃষ্টি করা হয়। এতে ব্যাহত হয় ভাটি অঞ্চলের বোরো আবাদ। এ যেন ভাটি অঞ্চলের কৃষকদের মরার উপর খড়ার ঘাঁ। সোমেশ্বরী নদীর উজানে তাওয়াকুচা একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হলে দু’উপজেলার কৃষকদের সেচ সংকট সমাধান হবে। এছাড়া সল্পমুল্যে রাবারড্যামের পানি সেচ কাজে ব্যাবহার করে দুই উপজেলার কৃষকরা অধিকহারে বোরো আবাদ করতে সক্ষম হবে।
শ্রীবরদী উপজেলার রানিশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা ও ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, সোমেশ্বরী নদীর উপর একটি রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি এলাকার কৃষকের দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া গেছে। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, সোমেশ্বরী নদীতে রাবারড্যাম নির্মাণ করা হলে দুই উপজেলার কৃষকদের সেচ সংকটের সমাধান হবে। কৃষকরা পাবে সল্পমূল্যে রাবারড্যামের পানি। এতে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতীতে চাষাবাদের পরিধিও বাড়বে। কৃষি ক্ষেত্রে ঘটবে বিপ্লব।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষকদের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে সোমেশ্বরী নদীর উপর রাবারড্যাম নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে রাবারড্যাম নির্মান করা হবে।

নয়াশতাব্দী/ইআর