
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে। শেষ পর্যন্ত এই সংশোধন প্রস্তাবটি পাশ হলে অর্থবিল, আস্থাভোট ছাড়া সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে সংসদে মতামত জানাতে পারবে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের মুলতবি বৈঠক শুরু হয়। তবে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের জন্য ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত তারা আসেনি।
এছাড়া, বৈঠকে সংসদে নারী আসন ৫০ থেকে একশ করার প্রস্তাব এবং গুরুত্বপূর্ণ চারটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ছাড়াও আসন প্রাপ্তির ভিত্তিতে অন্য কমিটির অর্ধেকগুলোতে সভাপতি পদে বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা থাকবেন, তাতে দলগুলো ঐকমত্য হয়েছে।
তবে আলোচনা হলেও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংসদের উচ্চকক্ষ ও নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়নি।
বৈঠক শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু অর্থবিল ও আস্থা ভোটের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ জাতীয় সংসদের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিরোধী দল থেকেও সংসদীয় কমিটির প্রধান থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, নারী আসনে ভোটের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে একমত হওয়া যাবে বলে আশা করছি৷ প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে দুটি দল ছাড়া বাকি সবাই একমত। তাছাড়া, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে কিছু কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছেন৷ এটা নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি৷
আগামী মাসের মধ্যে জুলাই সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আলী রিয়াজ। তিনি জানিয়েছেন, সার্বক্ষণিকভাবে সব দলের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আগামীকাল থেকে জামায়াতে ইসলামী বৈঠকে যোগ দেবে৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, নারী সংসদ সদস্য পদ একশতে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছি৷ তবে এক্ষেত্রে ভোটের পদ্ধতির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়নি৷ অনেকে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে। এছাড়া, আরও নানা প্রস্তাবনা এসেছে৷ বিষয়টি নিয়ে পরে আলোচনা হবে৷
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়টি আমাদের ৩১ দফায় রয়েছে৷ আমরা বলেছি, উচ্চকক্ষে ১০০ আসন থাকবে৷ এতে অধিকাংশ দল একমত৷ তবে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি৷ তাছাড়া, দেশে আইনের শাষণ প্রতিষ্ঠায় প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে কিছু ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করে দেয়ার প্রস্তাব করেছে বিএনপি৷ এর সাথে অনেক দল একমত৷
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বললেন, নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় পরিষদ করতে প্রস্তাব দিয়েছি। ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথবিবৃতি নিয়ে সমালোচনা করে জামায়াত। অনানুষ্ঠানিকভাবে দলটির নেতারা জানিয়েছেন, সেই ঘটনার প্রতিবাদে ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের সভা বয়কট করেন তারা।
নয়াশতাব্দী/এসআর