মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ যখন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে, ঠিক তখনই দৃশ্যপটে প্রবেশ করল আরেক পরমাণু শক্তিধর দেশ উত্তর কোরিয়া। কিম জং উনের শাসিত রাষ্ট্রটি এবার সরাসরি ইরানের পক্ষ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ চালিয়েছে। এক রাষ্ট্রীয় বিবৃতিতে কিম প্রশাসন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা কেবল ইরানের ওপর আঘাত নয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই বিবৃতির খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিসিএনএ। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের এ ধরনের বর্বর আচরণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হামলা এবং এটি একটি মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন।
তারা আরও দাবি করে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর ক্ষেত্র তৈরি করছে এবং ইসরায়েল যে কেবলমাত্র একটি দখলদার রাষ্ট্র নয়, বরং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ক্যান্সারের মতো একটি হুমকি-তা আবারও প্রমাণিত হলো।
এখানেই থেমে থাকেনি উত্তর কোরিয়ার বক্তব্য। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, বিশ্ব আজ যে গুরুতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট করে যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ইসরায়েলের মতো একটি আগ্রাসী রাষ্ট্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থির করে তুলেছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইরানের রাজধানী তেহরানে। ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ইরান ‘আয়রন রেসপন্স’ নাম দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালায়।
এই সংঘাতের পটভূমিতে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান যেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক নতুন নাটকীয় মোড়। বিশ্বের অন্যতম নিঃসঙ্গ, একঘরে, কিন্তু সামরিক দিক থেকে বিপজ্জনক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত উত্তর কোরিয়া এবার ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে কেবল বিবৃতি নয়, এক ধরনের ‘ভৌগোলিক মেরুকরণ’-এর বার্তা দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে রাশিয়া-চীন-ইরান-উত্তর কোরিয়া, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল-ইউরোপীয় মিত্ররা। এই দুই পক্ষের চাপাচাপিতে সংঘাতের মাত্রা বেড়ে চলেছে। আর এতে করে মধ্যপ্রাচ্যের সীমিত রণক্ষেত্র এখন পরিণত হচ্ছে বৈশ্বিক ভূরাজনীতির বিস্ফোরক অঙ্গনে।
উত্তর কোরিয়ার এই অবস্থান ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরি করবে নিঃসন্দেহে। বিশেষ করে যখন বিশ্বজুড়ে সমালোচনার তীর ইসরায়েলের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তখন পরমাণু শক্তিধর আরেক রাষ্ট্রের এমন প্রকাশ্য আক্রমণ আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।