২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

১৬ মে, ২০২৫

শিক্ষকদের অপমানের বিচার না হলে ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি

কুয়েট শিক্ষক সমিতি: ছাত্ররা শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়নি, ভিসি দোষী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

নয়া শতাব্দী প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ২:৪৬ অপরাহ্ন
কুয়েট শিক্ষক সমিতি: ছাত্ররা শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়নি, ভিসি দোষী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি। দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করার পরও ছাত্ররা শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়নি বলেও অভিযোগ তাদের। শিক্ষকদের অপমান-অপদস্থের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। উপাচার্য (ভিসি) দোষ করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন তারা। তবে দোষী না হলে ভিসির মর্যাদা সম্মুন্নত রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ভিসির পদত্যাগের দাবি চলমান অনশনের মধ্যে বুধবার (২৩ এপ্রিল) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব দাবি তুলে ধরেছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, “শিক্ষকদের গায়ে থুথু দেওয়া, অমর্যাদা করা, গায়ে হাত তোলাসহ সব অপমান অপদস্থের সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। দোষ থাকলে ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর দোষী না হলে ভিসির মর্যাদা সমুন্নত রাখা হোক। শিক্ষকদের অপমান অপদস্থের সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকবে।”

প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক হোসেন। এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহিদুল ইসলামসহ সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, “১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার জের ধরে আজ পর্যন্ত কুয়েট অশান্ত। উত্তরণের আশানুরূপ দিক নির্দেশনা নেই। শিক্ষা উপদেষ্টা ও ইউজিসির কমিটি তদন্ত করছে। আমরা কষ্ট নিয়ে এ আয়োজন করছি। ওই ঘটনায় শিক্ষকের মাথা থেকে রক্তও ঝরেছে। শিক্ষকরা ছাত্র ও প্রশাসনের সঙ্গে থেকে সুরাহার চেষ্টা করেছে। ছাত্রদের দাবি ছিল পাঁচটি। তার সবগুলোই যথোপযুক্তভাবে পূরণ করার চেষ্টা করেছে। পরে ৫ দফা ৬ দফায় মোড় নেয়। এটা নিয়ে শিক্ষকরা যৌক্তিক অবস্থান নেয় ও কথা বলে।”

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সময় যতো গড়ায় তত ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের ভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হয়েছে। কুয়েট প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার কারণে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করা হয়েছে। নামাজ পড়তে না দেওয়া, ইন্টারনেট বন্ধ, বিদ্যুৎ পানি বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। এগুলোর কোনোটাই সত্য নয়। ছাত্রদের মুখোমুখি শিক্ষকরা হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এগুলোর সুযোগ অন্য কেউ নিতে পারে। বারবার শিক্ষকদের হেয় করা হচ্ছে। শিক্ষকদের বক্তব্য নিয়ে ট্রল করা হয়, শিক্ষকদের অসম্মানিত করা হয়, শিক্ষকদের বার বার নিগৃহীত করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন ব্যানারে ঘটনাটি ছড়িয়ে দিচ্ছে। কুয়েটে ফার্স্ট কেস হিসেবে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু কিসের ফার্স্ট কেস।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকরা সুনাম রক্ষায় অবিচল থাকবে, এটাকে ব্যাটেল গ্রাউন্ড বানিয়ে সুবিধা নিতে চাওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। অপরাধীদের শনাক্ত ও শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা প্রয়োজন হলে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখবে। শিক্ষকদের আহত করার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে যাবে না। ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমরা একমত ভিসির নিয়োগে আমাদের হাত নেই। ওনাকে অপসারণের দায়িত্ব শিক্ষকদের নয়। ছাত্রদের পাঁচটি দাবির সাথে আমরা একমত। এভাবে বলার পরও ছাত্ররা শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়নি। কিন্তু ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আমরা শিক্ষকরা কিছু করতে পারি না। আমরা কুয়েটের সুনাম রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারি। রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস গঠনে ভিসিকে সময় দেওয়া দরকার ছিল। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আমরাও আন্দোলনে নামতে প্রস্তুত। ভিসিকে নিয়োগ দেয় সরকার। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে দোষী সাব্যস্ত হলে ভিসি অপসারণ হোক। দোষী না হলে তিনি অপসারণের সুযোগ নেই।”

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এরপর ১৪ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আগামী ২ মে থেকে আবাসিক হল খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন এবং ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোয় প্রবেশ করেন। ১৬ এপ্রিল দুপুরে মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। গত রোববার উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয় এবং বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে গত সোমবার বিকেল ৪টা থেকে ৩২ জন ছাত্র আমরণ অনশন শুরু করেন, তাদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন ২৬ জন শিক্ষার্থী অনশনে আছেন।

এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে তালা ভেঙে আবাসিক হলে প্রবেশ করেন ছাত্রীরাও।

নয়াশতাব্দী/সাইদুর