১৭ আষাঢ়, ১৪৩২

০২ জুলাই, ২০২৫

ঢাবিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন

নয়া শতাব্দী ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৫, ৫:২৪ অপরাহ্ন
ঢাবিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন

জুলাই বিপ্লব যেখানে শুরু হয়েছিল, সেই স্থানেই বিপ্লবের চেতনাকে কবর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সাতজনই আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত, যা শিক্ষক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

সোমবার (৩০ জুন) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ক্লাবের নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ বিতর্কের সূচনা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, এই কমিটি গঠনের মাধ্যমে শুধু সাদা দল নয়, বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের পুনর্বাসনের পথ প্রশস্ত হলো। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে অপমান করা হলো ঢাবির বুকেই।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে কলা অনুষদের ডিন ও সাদা দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান ক্লাবের ১৫ সদস্যের কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান এবং নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আমজাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে এই সর্বসম্মত কমিটি গঠিত হয়েছে।

ঘোষিত কমিটিতে সাদা দলের সভাপতি ও ছয়জন সদস্য, এবং নীল দলের সেক্রেটারি ও ছয়জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত আছেন। সম্পাদক হিসেবে আছেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান। তিনি আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল নীল দলের হয়ে শিক্ষক সমিতিতে দুইবারের  নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। সহ-সভাপতি করা হয়েছে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমকে, যিনি নীল দলের হয়ে সিনেট সদস্য ছিলেন। যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে ড. রাদ মুজিব লালন, যিনি এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন—এই নিয়োগটি আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে হয়েছিল। এছাড়া তিনি চাকরিচ্যুত বিচারক এসএম মুজিবুর রহমানের ছেলে। 

কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদ মাহমুদ (নীল দলের আহ্বায়ক, আইবিএ) এবং কারুশিল্প বিভাগের জাহাঙ্গীর হোসেন (যুগ্ম আহ্বায়ক, চারুকলা অনুষদ নীল দল)। আরেক সদস্য গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাভীদ ইকবাল বাঙালী। তিনি ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন। জুলাই আন্দোলনের বিরোধীতা করায় তিনি শিক্ষার্থীদের বয়কটের মুখে আছেন।

এই কাজটি হয়েছে বিএনপিপন্থি সাদা দলের নেতৃত্বের হাত ধরে। উল্লেখযোগ্যভাবে, বিএনপির জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান স্মরণে গঠিত ৫৮ সদস্যের কমিটির সদস্যসচিব ও সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের হাত ধরেই এই পুনর্বাসন সম্পন্ন হলো।

সচেতন শিক্ষক সমাজ বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে নীল দলের শিক্ষকরা স্বৈরতন্ত্রকে মদদ দিয়েছে। তারা ভুয়া নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে, ক্যাম্পাসে ছাত্র নিপীড়নকে নিরুৎসাহিত না করে উল্টো উৎসাহ জুগিয়েছে। আজ সেই সহযোগীদের ঢাবি শিক্ষক ক্লাবের মতো সম্মানজনক স্থানে পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে গোটা দেশে একই রকম ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের বার্তা দেওয়া হলো। জুলাই বিপ্লবের শহীদের রক্তের দাগ শুকায়নি এখনও। আর তার আগেই সেই চেতনার ওপর ঘৃণার চাদর চাপিয়ে দেওয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের নতুন কমিটির মাধ্যমে।

নয়াশতাব্দী/এসআর