
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে রেখেও নাগরিক সেবা চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। একইসঙ্গে মেয়র হিসেবে শপথ না দেওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন বন্ধ হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (১৫ জুন) নগর ভবনের সামনে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ইশরাক। এই সময় তিনি বলেন, "নগর ভবনের ফটকে তালা খোলা হবে না। এটা আন্দোলনের প্রতীক। তবে জনগণের দৈনন্দিন সেবা—বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন সনদ ইত্যাদি জরুরি বিষয় আমাদের তত্ত্বাবধানে চলবে।"
গত ১৪ মে থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে ইশরাক সমর্থক, বিএনপি নেতা-কর্মী ও ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এক দফা ৪৮ ঘণ্টার বিরতির পর আন্দোলন আবারও গতি পায়। ঈদের আগে টানা তিন সপ্তাহ নগর ভবনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অচল ছিল। পরে ৩ জুন ঈদের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে সাময়িক বিরতি ঘোষণা করেন ইশরাক।
তবে ঈদের পরও নগর ভবনের তালা খোলা হয়নি। সরকারি ছুটি শেষে অফিস খুললেও কর্মকর্তারা ঢুকতে পারেননি। ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। শুধু পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কার্যক্রম সীমিতভাবে চালু রয়েছে।
ইশরাক হোসেন বলেন, “আমি গায়ের জোরে নয়, সাংবিধানিকভাবে ও জনগণের ভোটে বৈধ মেয়র। বরং ভবিষ্যতে সরকারের বিরুদ্ধেই আইন ও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠবে।” তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন আমাকে বসতে দেবেন না। এটা আইন উপদেষ্টার বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার।”
সরকারকে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আহ্বান জানাবো, আপনারা দ্রুত এই বিষয়টির নিষ্পত্তি করুন। তাহলে অচলাবস্থা কেটে যাবে। না হলে এই সংকট চলতেই থাকবে।”
তালাবদ্ধ নগর ভবনে কীভাবে নাগরিক সেবা চালু রাখা হবে—এ প্রশ্নের সঠিক ব্যাখ্যা এখনো দেননি ইশরাক। তবে তিনি বলেছেন, “জুন ভিত্তিক যে অফিসগুলো আছে, সেভাবেই সেবাটা আমরা চালু করবো। সেটা ‘ইমিডিয়েটলি’ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবেন না। কারণ আন্দোলন চলবে, এবং সেটাই এখন ‘প্রথম অগ্রাধিকার’।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনের পর চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ওই ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। পরে ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে বিরত থাকে ‘আইনি জটিলতার’ কারণ দেখিয়ে।
এর পর থেকেই নগর ভবনের সামনে আন্দোলনে নেমেছেন ইশরাকের সমর্থকেরা। তারা দাবি তুলেছেন—“শপথ চাই, মেয়রের চেয়ারে বসুক ইশরাক ভাই।”
নয়াশতাব্দী/ইআর