
আজ মঙ্গলবার ১৫ জুলাই। এক বছর আগে এই দিনে, একদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের ভয়াবহ হামলা, আর অন্যদিকে মন্ত্রীদের উস্কানিমূলক বক্তব্য—সব মিলিয়ে “জুলাই স্মৃতি ক্যালেন্ডার”-এ ১৫ তারিখটি সেই দিন, যেদিন থেকে ছাত্রদের আন্দোলন রূপ নিতে থাকে জনতার গণআন্দোলনে।
এদিন বেলা ১২টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। আগের রাতের ‘রাজাকার’ ট্যাগিংয়ের ক্ষোভ তখনও কাটেনি, বরং তা ছড়িয়েছে আরও বেশি।
হঠাৎ করেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিজয় একাত্তর হলের সামনে। আন্দোলনকারীদের আটকে রাখার খবরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা ক্যাম্পাস। আগে থেকেই অবস্থান নেয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন হলে।
শিক্ষার্থীদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপের বিপরীতে সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলে এই সংঘর্ষ। নারী শিক্ষার্থীসহ আহত হয় অন্তত ৪০০ জন। বিকেল ৪টার পর ক্যাম্পাসের দৃশ্যমান দখল নেয় ছাত্রলীগ। হেলমেট, লাঠিসোটা নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে চলে তাদের মহড়া।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে এদিন প্রথমবারের মতো মাঠে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১২টার দিকে প্রগতি সরণী, বাড্ডা ও কুড়িলে অবস্থান নিয়ে ইউআইইউ, এআইইউবি ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে।
এদিন শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা চলে দেশজুড়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হামলার রেশ পৌঁছে যায় ষোলশহর পর্যন্ত। সংঘর্ষ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। একই ধরনের ঘটনা সারাদিন চলতে থাকে রংপুর, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহীতেও।
ছাত্রলীগের হামলায় শিক্ষার্থীরা যখন রক্তাক্ত, তখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেন তৎকালীন মন্ত্রীরা।
সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের ওপর আবারও কয়েক দফা সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় পুলিশ। হল প্রভোস্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন উপাচার্য।
নয়াশতাব্দী/এসআর